Select Page

সুইডেনে বাড়ি কেনা

May 29, 2021 | জীবন যাপন, বাড়ি

সুইডেনে টাকা থাকলে বাঘের দুধ পাওয়া যাক বা না যাক ,,,খুব সহজেই বাড়ি কিনতে পাওয়া যায়। তবে সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো ,,,সুইডেনে পকেটে টাকা না থাকলেও বাড়ি কিনতে পারা যায় !!!

সুইডেনে বাড়ি কেনার সাথে সম্পর্কিত অনেক ভাগ আছে। যেমন

১. ভাড়া বাড়ি

২. এপার্টমেন্ট

৩. ভিলা বাড়ি

৪. সামার কটেজ

৫. জমি (কৃষি, শিল্প বা বাড়ি নির্মাণ )

৬. জঙ্গল (গাছ মাছ পশু)

৭. জলাশয় (পুকুর নদী সমুদ্র)

এগুলি প্রতিটি কেনার নিয়ম কানুন সুযোগ সুবিধা ভিন্ন ভিন্ন। আজকে শুধু এপার্টমেন্ট এবং ভিলা নিয়ে কথা বলবো।এপার্টমেন্ট কে সুইডিশ ভাষায় বলে “lägenhet” তবে অনেক সময় ভাড়া বাড়িকেও এটি বলা হয়। ফলে এই সমস্যা সমাধানের জন্য ,,এপার্টমেন্টে থাকার অধিকারের উপর ভিত্তি করে এর আরেকটি নাম আছে , সেটি হলো “bostadsrätt”.সুইডেনে এসব এপার্টমেন্ট কেনার সবচেয়ে বড় কষ্ট হলো ,,,প্রতি মাসে আপনাকে বাড়ি ভাড়ার মত একটি নির্দিষ্ট পরিমান টাকা দিতে হবে। একে বলে “avgift” . মূলত এপার্টমেন্ট মালিকেরা একটি সমিতি বা কমিটি করে এই টাকা নিয়ে থাকে। তবে এই টাকা দেয়া বাধ্যতামূলক।এই টাকা দেবার ফলে আপনি যে যে সুবিধা পেতে পারেন :

১. ঘর গরম করার সব খরচ। শীতপ্রধান দেশে এই খরচ অনেক বেশি। ফলে এপার্টমেন্টে থাকলে ইচ্ছামত ঘর গরম করা যায়।

২. পানির খরচ। ইচ্ছামত ঠান্ডা ও গরম পানি ব্যবহার করা যায়।

৩. ইন্টারনেট / টেলিফোন / টেলিভিশন খরচ।

৪. পার্কিং বা গ্যারাজ

৫. বাসার সুয়ারেজ লাইন বা ইত্যাদি নষ্ট হলে সেটার খরচ।

৬. ছাদ ঠিক করার সকল খরচ

৭. বাসার ভেন্টিলেশন এর খরচ

৮. বাসার সামনে পার্ক এবং বাচ্চাদের খেলার ব্যবস্থা।

৯. কাপড় ধোয়ার ব্যবস্থা

১০. ময়লা ফেলার খরচএরকম আরো অনেক কিছু আছে। 

তবে সব এপার্টমেন্ট সমিতি বা কমিটি থেকে সব সুযোগ সুবিধা পাবেন না। অনেক কম বেশি হয়।

এপার্টমেন্ট এর মালিক হিসেবে আপনি অনেক কিছু করতে পারবেন আবার অনেক কিছু পারবেন না। তালিকা অনেক দীর্ঘ। তবে সহজভাবে বলি বাসার ভিতরের সব কিছু যেমন ফ্রিজ টিভি চুলা ইত্যাদি আপনি ইচ্ছামত পরিবর্তন করতে পারবেন নিজ খরচে। কিন্তু বাসার বারান্দায় যদি কাঁচের দেয়াল করতে চান তবে সমিতির অনুমতি লাগবে।রাজধানী এবং কিছু বড় শহর বাদে আপনি আপনার নিজের কেনা এপার্টমেন্ট অন্য কাউকে ভাড়া দিতে পারবেন না। এমনকি সাবলেট দিতেও পারবেন না।

 একান্তই ভাড়া বা সাবলেট দিতে হলে সমিতির অনুমতি লাগবে।
একাধিক এপার্টমেন্ট কেনা যায় না ,,,,,কিছু আইনি জটিলতা আছে , তবে আইনের অনেক ফাঁক ও আছে।আপনি একজন দুইজন বা কয়েকজন মিলেও একটি এপার্টমেন্ট কিনতে পারবেন। তবে বেশি সদস্য হলে সেক্ষেত্রে এপার্টমেন্টের সাইজ দেখে তারপর অনুমতি দেয়া হবে। এপার্টমেন্টের ক্ষেত্রে কাগজে কলমে আপনি প্রকৃত মালিক না। বরং আপনি এই বাসায় থাকার অনুমতি পাওয়া মানুষ।

ভিলা বাড়ি : এটির সহজ বাংলায় বলা যায় নিজের বাংলো বাড়ি। এটির সব খরচ নিজের। সাধারনত একতলা / দোতালা এবং কিছুক্ষেত্রে তিন তলা হয়। নিজের মত করে সব কিছু করতে পারবেন। এমনকি চাইলে আপনি পুরো ভিলা ভাড়া দিতে পারেন অথবা সাবলেট রাখতে পারেন। আইন অনুযায়ী ভাড়া বা সাবলেট দিতে হলে অনুমতি লাগবে না। তবে কাগজে কলমে চুক্তি থাকতে হবে। টাকা থাকলে আপনি একাধিক ভিলাও কিনতে পারবেন ,,,আইনি জটিলতা নেই।তবে আপনি যদি ভিলা ভেঙে নতুন করে বানাতে চান অথবা পুরাতন বাড়িতে নতুন করে আরো ঘর তুলতে চান ইত্যাদি ক্ষেত্রে পৌরসভার অনুমতি লাগবে।যেহেতু আপনি এক্ষেত্রে সত্যিকার মালিক হিসেবে বিবেচিত হন। ফলে সরকারি প্রতিষ্ঠান “länsstyrelsen ” থেকে মালিক হিসেবে কাগজ দেয়। ভিলা মালিক হিসেবে আপনাকে অল্প কিছু বিশেষ ট্যাক্স দিতে হয়।


*************************************বাড়ি অথবা এপার্টমেন্ট কেনার জন্য আপনার দরকার ব্যাংক ঋন। আর ব্যাংক ঋন পাওয়ার জন্য আপনার দরকার গত ২ বা ৩ বছর ধরে ভালো আয়। চাকরি বা ব্যবসা থেকে এই আয় থাকলেই হবে। এমনকি আপনার ভালো আয় না থাকলেও আপনি ব্যাংক ঋন পেতে পারেন। তবে সেক্ষেত্রে সুদের হার অনেক বেশি হবে।আপনার নিজের জমানো টাকা বা দেশের টাকা দিয়েও বাড়ি অথবা এপার্টমেন্ট কিনতে পারবেন তবে সেক্ষেত্রে নিশ্চিত থাকুন ট্যাক্স অফিস টাকার উৎস জানতে চাইবে। সঠিক জবাব দিতে না পারলে ঝামেলাতে পরবেন।সহজ পদ্ধতি : আপনি প্রথমে কয়েকটি ব্যাংকে কথা বলতে পারেন , বলবেন আপনি বাসা কিনতে চান ,,,এর জন্য দরকার ঋনের পৃ এপ্রুভাল ,,,এটির সুইডিশ নাম “lånelöfte”মনে রাখবেন এটি খুবই জরুরি জিনিস। এটি দিয়ে আপনি বাড়ি কেনার সঠিক এবং নিশ্চিত পরিকল্পনা করতে পারবেন। মনে করুন আপনার হাতে আছে ৫ লক্ষ এবং ব্যাংক দিবে ২০ লক্ষ। তাহলে আপনি নিশ্চিত হয়ে গেলেন যে ,,, আপনি সর্বোচ্চ ২৫ লক্ষ এর মধ্যেই বাসা কিনতে পারবেন।

সুইডেনের বেশিরভাগ বাসা বিক্রি হয় নিলামের মাধ্যমে। 

প্রথমে একটি প্রাথমিক দাম নির্ধারন করা হয়। এরপর অনেকেই একটি বিশেষ তারিখ সেই বাসা ঘুরে ফিরে দেখে ,,,একে সুইডিশ ভাষায় বলে “visning” এরপর একটি বিশেষ তারিখ নিলাম ডাকা হয়। যে সর্বোচ্চ দাম বলবে সেই এই বাসা পাবে। আপনার হাতে থাকা “lånelöfte” দিয়ে আপনি বুঝতে পারবেন আপনার ক্ষমতা। সেই অনুযায়ী নিলামে ডাক দিবেন। আপনার যদি ২৫ লক্ষ এর “lånelöfte” থাকে তবে আপনি ১৮ বা ১৯ লক্ষ এর বাসা গুলি দেখতে পারেন। যাতে নিলামে জিততে পারেন।এখানে উল্লেখ্য যে , বাসা কেনার জন্য ব্যাংক ঋন কে বলা হয় “bolån” এটিতে সুদের হার 1.2 % থেকে ৩% এর মধ্যেই থাকে। এটি সাধারনত ৫০ বছরের জন্য দেয়া হয়। প্রতি মাসে কিছু কিছু করে ঋনের মূল টাকা + সুদের টাকা ফেরত দিতে হয়।

এছাড়া আপনি হাতের ৫ লক্ষ এর যে কথা লিখেছি ,,,সেটাও ব্যাংক থেকে ঋন হিসেবে পেতে পারেন , তখন এই ঋনের নাম হবে privatlån এটিতে সুদের হার সাধারনত ৩ % থেকে ৯% এর মধ্যেই থাকে। এটি সাধারনত ১ থেকে সর্বোচ্চ 15 বছরের জন্য দেয়া হয়। প্রতি মাসে কিছু কিছু করে ঋনের মূল টাকা + সুদের টাকা ফেরত দিতে হয়।আরো সহজ ভাবে বলি বাসার দাম ১০ লক্ষ হলে ,,,,আপনি ২ লক্ষ “privatlån ” + ৮ লক্ষ “bolån” হিসেবে ঋন নিয়ে কিনে ফেলতে পারেন। এরকম করলে আপনার নিজের পকেট থেকে একটি পয়সাও খরচ হবে না।সুইডেনে বেশিরভাগ সময় দেখা যায় ,,এপার্টমেন্ট অথবা বাড়ি কিনলে প্রতিমাসে ঋন + সুদ + অন্যান্য সব খরচ মিলিয়ে যত টাকা খরচ হয় , তার থেকে অনেক বেশি টাকা খরচ হয় বাসা ভাড়া নিলে।

সুইডেনে মাত্র ৪/৫ টি বড় বড় কোম্পনি আছে ,,যারা সমগ্র সুইডেনের সিংহভাগ বাসা বিক্রির ব্যবসা করে। কোন বাসা পছন্দ হলে এদের কাছে গেলে ,,,এরা নিজ উদ্যোগে ব্যাংক ঋন পেতে সার্বিক সহযোগিতা করে। বাসা কিনতে চাইলে এদের সার্ভিস নেবার জন্য আপনাকে একটি টাকাও দিতে হবে না , এটি ক্রেতার জন্য ফ্রি।অন্যদিকে কেনার পরে বাসা বিক্রি করে দিতে চাইলে আপনি এইসব কোপানির সাথে চুক্তি করতে পারেন। উনারা বাসার ছবি তুলে ,,নিজেরাই বিজ্ঞাপন দিয়ে নিজেরাই ক্রেতা খুঁজে এনে আপনার বাসা বিক্রি করতে সহায়তা করবে। তবে বিক্রেতা হিসেবে আপনাকে এদেরকে টাকা দিতে হবে ,,,সাধারনত মোট মূল্যের ৫% এরা নেয় তাদের সার্ভিস চার্জ হিসেবে।সুইডেনে অনেকগুলি ওয়েব সাইট থাকলেও একটি মাত্র ওয়েব সাইটেই প্রায় সব বাসা বিক্রির বিজ্ঞাপন পাওয়া যায় , সেটির নাম hemnet.se

কোন ব্যাংক থেকে ঋন নেয়া ভালো ? এটির উত্তর হলো ,,,, সুইডেনের বেশিরভাগ ব্যাংকের সার্ভিস প্রায় একই রকম। সুতরাং ব্যাংকের নাম বা সুনাম ইত্যাদি না দেখে ,,,যেখান থেকে সবচেয়ে কম সুদে ঋন পাবেন , সেটা থেকেই টাকা নিয়ে নিন। মনে রাখবেন এই ঋনের সুদের হার পুরাই মাছের বাজার। আপনি কথা বলে অনেক ক্ষেত্রেই ঋনের সুদের হার কমাতে পারবেন। চাইলে এক ব্যাংক থেকে ঋন নিয়ে বাসা কিনে পরে অন্য ব্যাংকেও চলে যেতে পারবেন। যেহেতু বাসাটি মর্টগেজ করে রাখা হয় ,,,তাই খুব সহজেই বাসার জন্য ঋন পাওয়া যায়।ভয়াবহ কথা হলো ,,,আপনি যদি ভয়াবহ “betalningsanmärkning” খান। তবে আপনার বাসার ঋন টি ব্যাংক বাতিল করে দিতে পারে। এরকম হলে ব্যাংক নিজ উদ্যোগে বাসাটি বিক্রি করে দিয়ে ,,,তাদের টাকা নিয়ে যাবে। আপনি আপনার বাসা হারাবেন।

ভিসা জটিলতা : ভিসার সাথে বাড়ি কেনার সরাসরি সম্পর্ক নেই। সুইডিশ পার্সন নম্বর থাকলে যদি আপনাকে ব্যাংক ঋন দেয় অথবা নিজের টাকা থাকে তবে আপনি সুইডেনে বাসা কিনতে পারবেন। ফলে ছাত্র ভিসা , ওয়ার্ক পারমিট , ইউরোপের অন্য দেশের ভিসা ,,,,,সবাই মানে সবাই বাসা কিনতে পারবেন। আইনি জটিলতা নেই। তবে মনে রাখবেন বাসা কেনার ফলে আপনি ভিসার ক্ষেত্রে সরাসরি কোন অতিরিক্ত সুবিধা পাবেন না।

যারা সরকারি সাহার্য্য বা সোশ্যাল নেন , উনারা ভুলেও বাসা বা এপার্টমেন্ট কিনবেন না। তাহলে সরকারি সাহার্য্য বা সোশ্যাল বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

সকল বিষয়