Select Page

সুইডেনে জব সার্চিং ভিসা বা চাকরি খোঁজার নতুন ধরনের ভিসা এবং বাটপারি

Sep 5, 2022 | অভিবাসন এবং ভিসা, ওয়ার্ক পারমিট, চাকরি এবং ওয়ার্ক পারমিট

 সুইডেনে জব সার্চিং ভিসা বা  চাকরি খোঁজার নতুন ধরনের ভিসা  এবং বাটপারি :

সুইডেনে যেমন কিছু বাটপার আছে , তেমনি বাংলাদেশেও কিছু বাটপার আছে।  তবে সবচেয়ে বেশি বাটপার পাবেন এখন ইউ টিউবে, একজন বা দুইজন না , হাজার হাজার !

সুইডেনে জব সার্চিং ভিসা বা  চাকরি খোঁজার নতুন ধরনের ভিসা চালু করা হয়েছে।  তবে এর মধ্যে নানাবিধ কাহিনী আছে।  আসুন ধীরে ধীরে সত্য টি জানি। 

কি আছে এই নতুন ধরনের ভিসায়।  সুইডেনের ইম্মিগ্রেশন এর ওয়েব সাইট দেখলে অনেকেই বিভ্রান্ত হতে পারেন।  এতো সহজ।  সবাই কি পাবে এই ভিসা ?

কি কি লাগবে এই ভিসা পেতে , খুবই সহজ। 

১. পাসপোর্ট 

২. যেকোন দেশ থেকে যে কোন বিষয়ে মাস্টার্স বা পি এইচ ডি  ডিগ্রি। 

৩. ব্যাংকে অল্প কিছু টাকা বা ব্যাংক ব্যালেন্স 

৪. ইন্সুরেন্স কিনতে হবে, সেটাও নামে মাত্র টাকার 

৫. কোন চাকরির অফার লেটার বা এরকম কাগজ লাগবে না। 

৬. সহজেই ওয়ার্ক পারমিটে পরিণত করার সুযোগ। 

এইসব কথা কিন্তু বাটপারগুলি বার বার বলতেছে কিন্তু ভিতরের আসল কথা বলে না , যা সহজে গুগুল করেও পাবেন না , সেগুলি শুনেন। নিচের পয়েন্টগুলি আমার অভিজ্ঞতায় , তাই সবকিছুর লিংক পাবেন না। 

১. সুইডেনে বহুদিন থেকেই স্কিল মাইগ্রেশন বা যোগ্য মানুষদের জন্য ভিসা ব্যবস্থা চালুর কথা চিন্তা করা হচ্ছিলো , আর সেটার ভিত্তিতেই এই সুযোগ। সুইডেনে যেসব ক্ষেত্রে দক্ষ এবং উচ্চশিক্ষিত  মানুষের দরকার আছে শুধু তাদের জন্য এই ভিসা দেয়া হবে। 

২.  আইনে বলা হয়েছে যে , আপনার মাস্টার্স অথবা পি এইচ ডি এর সার্টিফিকেট সুইডেনের Swedish Council for Higher Education (UHR)  বিবেচনা করে তারপর তারা অনুমতি দিলে ভিসা প্রসেস শুরু হবে।  

৩. Swedish Council for Higher Education (UHR)  থেকে বাংলাদেশের  সার্টিফিকেট ভেরিফাই করতে কমপক্ষে ৩ থেকে ৬ মাস কিছু ক্ষেত্রে বছর খানেক সময় লাগে।  অর্থাৎ ভিসা আবেদন করে আপনাকে বছরখানেক বসে থাকতে হতে পারে। 

৪. Swedish Council for Higher Education (UHR)  বাংলাদেশের অনেক ইউনিভার্সিটি এর অনার্স + মাস্টার্স কে সুইডিশ মানদন্ডে শুধু অনার্স হিসেবে বিবেচনা করে।  এরকম হলে ভিসা হবে না ১০০% নিশ্চিত। 

৫. প্রতিমাসে কমপক্ষে ১৩ হাজার সুইডিশ ক্রোনোর হিসেবে ৯ মাসের টাকা আপনার ব্যাংকে থাকতে হবে অর্থাৎ কমপক্ষে ১১ থেকে ১২ লক্ষ টাকার ব্যাংক ব্যালেন্স দেখাতে হবে। 

৬. আপনি ৩ মাস থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৯ মাস পর্যন্ত এই ভিসা পেতে পারেন।  এই ভিসা বাড়ানো বা এক্সটেনশন করার কোন সুযোগ নেই। 

৭. আপনি যদি সুইডেনে ভাল চাকরি পান তবে এই ভিসা পাল্টিয়ে ওয়ার্ক পারমিট নিতে পারবেন।  সেক্ষেত্রে যেনতেন চাকরি হলে চলবে না।  একা হলে কমপক্ষে ১৩ হাজার সুইডিশ মাসিক বেতনের স্থায়ী চাকরি পেতে হবে।  আর পরিবার থাকলে পরিবারের সবার থাকা খাওয়া + বাড়িভাড়া + ট্যাক্স ইত্যাদি মিলিয়ে অনেক টাকার বেতনের চাকরি পেতে হবে নতুবা ওয়ার্কপারমিট দেয়া হবে না।  সেক্ষেত্রে আপনার সুইডেনে থাকা অসম্ভব হয়ে যাবে। 

৮. জব সার্চিং ভিসা বা  চাকরি খোঁজার ভিসাতে পরিবার নিয়ে সুইডেনে যাবার কোন সুযোগ নেই , আপনাকে একা যেতে হবে।  

৯. ডাক্তার এবং নার্স  কেউ আপনাকে সুইডেনে নিয়োগ দিবে না।  

কনস্ট্রাকশন বা  ফ্যাক্টরি ওয়ার্কার। কেউ আপনাকে সুইডেনে নিয়োগ দিবে না।  

ইলেকট্রিশিয়ান। কেউ আপনাকে সুইডেনে নিয়োগ দিবে না।  

ডাইভিং – বাস/ ট্রাক / ট্যাক্সি কেউ আপনাকে সুইডেনে নিয়োগ দিবে না।  

উকিল কেউ আপনাকে সুইডেনে নিয়োগ দিবে না।  

সেলসম্যান কেউ আপনাকে সুইডেনে নিয়োগ দিবে না।  

ইত্যাদি এরকম বহু পেশা আছে যেগুলিতে কেউ আপনাকে সুইডেনে নিয়োগ দিবে না।  

ইউরোপের অন্য দেশে এসব পেশায় নিয়োগ পাওয়া গেলেও , সুইডেনে সম্ভব না।  কারন মূলত এইসব পেশায় কাজ করতে চাইলে সুইডিশ ভাষা জানতে হবে এবং সুইডিশ লাইসেন্স থাকতে হবে।  (যা নয় মাসের মধ্যে একেবারেই অসম্ভব)

১০. তাহলে কাদের জন্য এই ভিসা ? উত্তর হলো যারা মূলত আইটি সেক্টরে ভালো কাজ করতেছেন বা যোগ্যতা আছে অথবা যাদের পি এইচ ডি  ডিগ্রি বা গবেষনা করার যোগ্যতা এবং অভিজ্ঞতা আছে , তাদের জন্য মূলত এই ভিসা। 

১১. এছাড়াও যারা  সুইডেনে বড় বড় কোম্পানিতে ভালো ভালো পজিশনে চাকরির ইন্টারভিউ দিয়েছেন কিন্তু চাকরিদাতা শুরুতে কিছুদিন আপনাকে পরীক্ষামূলক ভাবে চাকরি দিয়ে টেস্ট করতে চান , এরকম ব্যাক্তিরা এই ভিসা পেতে পারেন। 

১২. যাদের ইউরোপের যে কোন দেশ থেকে মাস্টার্স বা পি এইচ ডি  ডিগ্রি আছে , উনারা তুলনামূলক সহজেই এই ভিসা পেতে পারেন। 

১৩. যারা সুইডেনে ব্যবসা করতে চান , উনারাও এই ভিসা পেতে পারেন তবে কমপক্ষে ৫০ লক্ষ টাকা বিনিয়োগের যোগ্যতা + ভালো ব্যাংক সলভেন্সি + সাথে সকল আয়ের উৎস এবং ট্যাক্স দেখাতে পারলে ভিসা বিবেচনা করা হতে পারে।  

১৪.  সুইডেনে জব সার্চিং  বা  চাকরি খোঁজার ভিসায় থাকা অবস্থায় কোন কারনে অসুস্থ্য হলে মহা বিপদে পরবেন।  ইন্সুরেন্স যদি কাজ না করে , তবে প্রতি দিনের চিকিৎসা খরচ অসম্ভব অসম্ভব বেশি হবে , এরচেয়ে অসুস্থ্য হলে দেশে চলে যাওয়া ছাড়া উপায় থাকবে না। 

১৫. বর্তমানে অলিখিত ভাবে বাংলাদেশিদের জন্য রাজনৈতিক আশ্রয় চাওয়া বন্ধ।  আর যদি সে চেষ্টাও করেন তবে ৮৭% নিশ্চিত যে আপনাকে সুইডেন থেকে বের করে দিয়ে  কালো তালিকাভুক্ত করবে।  তাই সে পথে  না যাওয়াই ভালো।  ইউরোপের অন্য দেশগুলির মত সুইডেন এই ব্যাপারে একেবারেই উদার নয় বরং খুবই কড়া।  আর হ্যা ইউরোপের অন্য দেশের মত  সুইডেনে অবৈধ হিসেবে বসবাস করা যায় না। 

১৬. সারা দুনিয়াতে দুই ধরনের চাকরি আছে , গায়ে খাটা চাকরি এবং অফিসিয়াল চাকরি।  সুইডেনে সব ধরনের চাকরি গ্রহীতাকেই সম্মান করা হয়।  তবে কোন গায়ে খাটা চাকরির যোগ্যতা দেখিয়ে আপনি এই ভিসা পাবেন না।  বরং সুইডেনের চাকরির বাজার বিবেচনায় যদি আপনার অফিসিয়াল চাকরির যোগ্যতা থাকে তবেই শুধু ভিসা পেতে পারেন নতুবা নয়। 

১৭. দুনিয়ার কোন এজেন্সি বা কোন প্রতিষ্ঠানকে সুইডেন সরকার কোন প্রকার ভিসা দেবার অনুমতি দেয়  নাই।  তাই কেউ আপনাকে এই ভিসা করিয়ে দিতে পারবে না। সুইডেনে যত  বড় কোম্পনি হোক , নিজেরা ওয়ার্ক পারমিট দিতে পারে না , বরং চাকরি দিতে পারে আর সেই চাকরি দেখিয়ে আপনাকে নিজ যোগ্যতায় ভিসা নিতে হবে।   যদি কেউ বলে ভিসা করে দিবে এবং আপনি টাকা দিয়ে থাকেন তবে ১০০% নিশ্চিত থাকুন যে বাটপারের খপ্পরে পরেছেন।  

১৮. এই মুহূর্তে যারা সুইডেনে পড়ালেখা করতেছেন বা পড়ালেখার শেষ পর্যায়ে আছেন ,  তাদের জন্য বিশেষ একটি  জব সার্চিং  বা  চাকরি খোঁজার ভিসা রয়েছে।  সেটির আইন কানুন সম্পূর্ণ ভিন্ন এবং অনেকটাই সহজ।  “দুই” প্রকার জব সার্চিং  বা  চাকরি খোঁজার ভিসা কে কেউ “এক” মনে করে বিভ্রান্ত হবেন না।  

১৯. বাটপার চেনার একটি সহজ তরিকা দিচ্ছি।  যখন কোন এজেন্সি বা কাউকে প্রশ্ন করা হলে যদি বলে , বিস্তারিত জানতে ইনবক্স করুন অথবা খরচ জানতে সরাসরি অফিসে আসুন বা ফোন করুন।  তাহলে বুঝবেন এইটা বাটপার।  কারন  সুইডেনে সব কিছু প্রকাশ্য।  কোথায় কত টাকা লাগে এটা সবাই জানতে পারে।  তাই আবারো বলছি , অযথা লোভ করে টাকা খরচ করে , একদিকে যেমন টাকা এবং সময় নষ্ট করবেন , অন্যদিকে ভিসা তো পাবেন না বরং সুইডেনে কালো তালিকাভুক্ত হতে পারেন , যারফলে ভবিষ্যতে ইউরোপের অন্য দেশের ভিসাও পাবেন না।  লোভ থেকে দূরে থাকুন ,, যোগ্য হলে নিজে নিজেই আবেদন করুন। 

২০. এতকিছুর পরেও আপনার মনে যদি কোন প্রশ্ন বা দ্বিধা থাকে তবে নিশ্চিন্তে নির্ভয়ে ফোন করুন এই নম্বরে 

+46771235235  অথবা ইমেইল করুন এখানে  migrationsverket@migrationsverket.se

ব্যাক্তিগত ভাবে আমি কাউকে সাহার্য্য করি না।  তাই কিছু জানতে চাইলে মন্তব্যের ঘরে লিখতে পারেন। 

সকল বিষয়