Select Page

বৈষম্য মূলক আচরন

May 7, 2021 | জীবন যাপন, বৈষম্য মূলক আচরন

সুইডেনে যে কোন বৈষম্য মূলক আচরন প্রমান হলে আপনার চাকরি চলে যেতে পারে।  এমনকি ভবিষ্যতেও অন্য চাকরি পেতে সমস্যা হতে পারে।  আর চাকরিদাতার বৈষম্য মূলক আচরন প্রমান হলে জেল জরিমানা এবং প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স বাতিল হতে পারে। 

আসুন জেনে নেই সুইডেনে  বৈষম্য মূলক আচরন কাকে বলে ?

1. ছেলে নাকি মেয়ে :  কাজের জায়গাতে ছেলে মেয়ে বিভেদ করা যাবে না।  মেয়ে হিসেবে পানে সুপারি কম দিলে আদর করে বকা দিবেন ,,,আর ছেলে হলে তরকারিতে লবন কম হলে বাপ্ মা তুলে গালাগালি দিবেন ,,এটি হবে না।  বাস্তবে মেয়ে হিসেবে কেউ কাজের ক্ষেত্রে বেশি সুবিধা নিলে সেটি অবশ্যই অন্যায় কাজ হিসেবে বিবেচিত হবে।  যদিও এটি অনেক সময় প্রমান করা বেশ কঠিন। চাকরির জায়গাতে কেউ কাউকে গালাগালি করতে পারবে না, একেবারেই না। 

2. বয়স :  ও  তো বুইড়া , ওকি এটা করতে পারবে ?  এরকম কথা বলা হারাম।  কাউকে বয়স নিয়ে খোটা দেয়া যাবে না অথবা এরকম কিছু বলা বা করা যাবে না। বয়স্ক বা চোখে দেখে না ,,এরকম কেউ যদি রেস্টুরেন্টে খেতে আসে তবে রেস্টুরেন্টের কমর্চারীকে  খাবারের মেন্যু পড়ে শোনাতে হবে এবং সে  আইনত বাধ্য !

3. ধর্ম :  ও আপনি মুসলিম তাইলে তো ,,,,ও আপনি হিন্দু তাইলে তো ,,,,ও আপনি ক্রিষ্টান  তাইলে তো ,,,,

এভাবে ধর্ম নিয়ে বা ধর্মের ইংগিত দিয়ে কোন বাজে কথা বলা যাবে না।  কোন ধর্মকে হেয় করে কিছু বলা যাবে না। 

4. শারীরিক বা মানসিক সমস্যা : মনে করেন কেউ তোতলা অথবা পায়ে সমস্যা তাই দৌড়াতে পারে না।  এরকম হলে তাদের এই সমস্যা নিয়ে বাজে মন্তব্য অথবা কষ্ট পায় এরকম কিছু বলা বা করা  যাবে না। একইভাবে মানসিক সমস্যা থাকলে সেটি নিয়েও বাজে বা খারাপ কিছু করা বা বলা যাবে না।  তবে মালিক বা চাকরিদাতা চাইলে গোপন বা প্রকাশ্য মিটিং করে যিনি চাকরি করেন তার সাথে আলোচনা করতে পারবেন , যাতে কোম্পানি ঠিকমত চলে।   

5. নাস্তিক /আস্তিক /সমকামী :  সুইডেনে নাস্তিক /আস্তিক অথবা সমকামীদের সমান অধিকার।  কাউকেই নাস্তিক /আস্তিক অথবা সমকামী হিসেবে হেয় করা যাবে না বা কটু কথা বলা যাবে না।  বললে সেটি মারাত্মক শাস্তিযোগ্য অপরাধ হবে। 

6. যৌন হয়রানি : নতুন করে বলার কিছু নেই। প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষভাবে সকল প্রকার যৌন হয়রানী করা নিষিদ্ধ। 

7. বাড়ি কোথায়?  ও আপনার বাড়ি কুমিল্লা /নোয়াখালী /বরিশাল / সিলেট /উত্তরবঙ্গ ইত্যাদি বলে হেয় করলে বা উপহাস করলে অথবা এরকম যে কোন কিছু করলে সেটি হবে অপরাধ।  এমনকি আপনি যদি মজা করেও কাউকে বরিশাল্লা বা নোয়াখাইল্লা বলে কাজের জায়গাতে ডাকেন এবং সে যদি অভিযোগ করে তবে আপনার খবর আছে।  এটিও অপরাধ। 

***************এইবার শিখিয়ে দিচ্ছি , আপনার চাকরির জায়গাতে কোন কর্মচারী অথবা মালিক যদি আকাম কুকাম করে অথবা আপনি যদি নির্যাতনের শিকার হন তাহলে কি করবেন ?
1. যদি আপনার চাকরিদাতা অথবা মালিক   নিজে যদি অপরাধী না হয়।  সেক্ষেত্রে আপনি প্রথমে চাকরিদাতা অথবা মালিক  কে জানাবেন।  আমার পরামর্শ হলো ,,ইমেইল বা এস এম এস করবেন ,,এটি দলিল হিসেবে   গণ্য হবে। আপনার চাকরিদাতা বা মালিক কে এটি নিয়ে মিটিং করতে হবে বাধ্যতামূলক ভাবেই।  কিন্তু যদি চাকরিদাতা বা মালিক আইন না মানে তাহলে ,,,
2.  আপনি আপনার কাজের জায়গাতে যে লেবার ইউনিয়ন এর প্রতিনিধি “skyddsombud” আছেন উনার সাথে কথা বলবেন।  আপনি লেবার ইউনিয়ন এর সদস্য না হলেও এই সুবিধা পাবেন।  এবং লেবার ইউনিয়ন এর প্রতিনিধি আইনত এই সমস্যার কথা জনে  জনে  বলে বেড়াতে পারে না বা প্রচার করতে পারে না।  শুধু আপনাকে আইনত পরামর্শ এবং চাকরিদাতার সাথে মিটিং করে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করতে পারে।  এছাড়া সন্দেহজনক অপরাধীকে বাধ্যতামূলক  ছুটি অথবা পুরো প্ৰতিষ্ঠান দরকার হলে বন্ধ করে দিতে পারে ,,, আইনের এই ধারার নাম “৬:৬ এ”  3. Arbetsmiljöverket সরকারি অফিসে সরাসরি জানিয়ে দিতে পারেন।  ওয়েবসাইট হলো av.se  এছাড়া ফোন করেও বলতে পারেন  01073090000,  চাইলে নিজের নাম গোপন রেখেও মূল ঘটনা বলে দিতে পারেন, তাহলে সরকারি অফিস নিজ উদ্যোগেই তদন্ত করতে পারে। 
4. আরো একটি সরকারি অফিসে জানিয়ে দিতে পারেন , এর নাম হলো Diskrimineringsombudsmannen ওয়েবসাইট হলো do.se  এছাড়া ফোন করেও বলতে পারেন  08 120 20 700,  চাইলে নিজের নাম গোপন রেখেও মূল ঘটনা বলে দিতে পারেন, তাহলে সরকারি অফিস নিজ উদ্যোগেই তদন্ত করতে পারে। 
5. যদি ঘটনা জটিল হয়ে যায় , এবং মালিক আপনাকে কাজে আসতে  নিষেধ করে দেয়।  এরকম হলে আপনার আর্থিক সাহার্য্যের দরকার হতে পারে।  এইরকম হলে আপনি একটি সরকারি অফিসে জানিয়ে দিতে পারেন , এর নাম হলো Rättshjälpsmyndigheten ওয়েবসাইট হলো https://www.domstol.se/rattshjalpsmyndigheten/  এছাড়া ফোন করেও বলতে পারেন  060 13 46 00,  চাইলে নিজের নাম গোপন রেখেও মূল ঘটনা বলে দিতে পারেন, তাহলে সরকারি অফিস নিজ উদ্যোগেই তদন্ত করতে পারে। এটি মূলত সরকারি আদালত বা মেজিস্ট্রেট কোর্ট হিসেবে বিবেচনা করতে পারেন। 
6. সরাসরি উকিলের মাধ্যমে উকিল নোটিস পাঠাতে পারেন।  এটি খুব কার্যকরী তবে খরচ আছে।  কেস জিতে গেলে আপনি সব খরচ ফেরত পেতে পারেন।  সঠিক এবং নির্ভরযোগ্য উকিল পাবেন এখান থেকে।  এটি সরকারি লিস্ট ,,তাই ভেজাল নেই https://www.advokatsamfundet.se/Behover-du-advokat/Sok-advokat/       আপনার শহরের নাম এবং বিষয় লিখে সার্চ দিলেই পেয়ে যাবেন।  ভুলেও আমার মত ২ নম্বরি উকিলের কাছে যাবেন না।  
7. কিছু বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কিছু বিশেষ সমস্যা নিয়ে কাজ করে।  যেমন সমকামী অথবা রাজনৈতিক আশ্রয় ইত্যাদি।  আপনি আপনার প্রয়োজন বুঝে এদের সাহার্য্য নিতে পারেন, যেমন  Terrafem, rfsl, roks, tris, kvinnofridslinjen, brottsofferjouren, 

8. আপনি যদি সুইডেনে ওয়ার্ক পারমিটে থাকেন এবং এই ধরনের আকাম কুকামের ফলে ঝামেলায় পরে যান।  তবে সুইডেনের মাইগ্রেশন থেকেও কিছু সাহার্য্য নিতে পারেন।  সব সময় নিশ্চিতভাবে সাহার্য্য নাও পেতে পারেন। 
9. আপনি যদি কোন বড় প্রতিষ্ঠানে অথবা কোন সরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন, তবে সেক্ষেত্রে আপনি সরাসরি মানব সম্পদ বা HR ডিপার্টমেন্টে যোগাযোগ করে নানাবিধ সাহার্য্য পেতে পারেন।  এরকম অভিযোগ পেলে অনেক সময় অতিদ্রুত অন্য কোথাও বদলি করে দেয়। 
10. পুলিশ :  সুইডেনে সামান্যতম ঘটনা ঘটলে অথবা ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা থাকলেও পুলিশে জিডি করুন।  খুব সহজ।  পুলিশের ওয়েব সাইট থেকে জিডি করতে পারবেন খুব সহজে।  সেটাও ঝামেলা মনে হলে ফোন করেও জিডি করতে পারবেন।  ফোন নম্বর হলো 11414

সকল বিষয়