Select Page

সুইডেনে ভোক্তা অধিকার

May 8, 2021 | জীবন যাপন

সুইডেনে ভোক্তা অধিকার : জানার আছে অনেক কিছু !
সুইডেনে কি বাটপার নেই ? আছে , এবং কেনাকাটায় বাটপারি হয় অনেক বেশি। তবে সুইডেনে যারা আছেন বা আসবেন , তারা সহজেই জেনে নিন কিছু ভোক্তা অধিকার।

১. রশিদ বা ক্যাশমেমো (Kvitto) : সুইডেনে যেখান থেকে যাই কেনাকাটা করুন না কেন , ক্রেতা হিসেবে আপনি পাবেন রশিদ বা ক্যাশমেমো। এমনকি সেকেন্ডহ্যান্ড বা প্রাইভেট কারো কাছ থেকে কিছু কিনলেও বিক্রেতা ক্যাশমেমো দিতে বাধ্য। একটি সাধারন কাগজে তারিখ, দাম, বিক্রিত পণ্য, ক্রেতা, বিক্রেতা ইত্যাদির উল্লেখ থাকলে সেটিই ক্যাশমেমো হিসেবে গ্রহণযোগ্য। তবে বিক্রেতা “প্রতিষ্ঠান” হলে নির্দিষ্ট ক্যাশমেমো দিবে। এছাড়া ই-মেল এবং এই ধরণের যোগাযোগও ক্যাশমেমো হিসেবে গ্রহণযোগ্য। মোদ্দা কথা কিছু কিনলেই ক্যাশমেমো নিবেন। এখানে আরো উল্লেখ্য যে , ক্রেতা হিসেবে আপনি ক্যাশমেমো না নিলে , কোনো শাস্তি পাবেন না , তবে নিজের ভালোর জন্য ক্যাশমেমো নিবেন। আর বিক্রেতা হিসেবে ক্যাশমেমো না দিলে, সেটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

২. বদলানো (Bytesrätt) : সুইডেনে কোনো বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান থেকে যে কোনো কিছু কিনলে আপনি তা বদলে নিতে পারবেন। এখানে প্রথম শর্ত হলো আপনাকে কেনাকাটার রশিদ বা ক্যাশমেমো দেখাতে হবে। অন্যান্য শর্ত আছে। যেমন
i) সঠিক কত দিনের মধ্যে বদলাতে পারবেন সেটি ক্যাশমেমোতে লেখা থাকে। সাধারনত পণ্যভেদে আপনি ৩ দিন থেকে ১ বছরের মধ্যে পণ্যটি বদলাতে পারবেন।
ii) কোনো কিছু কিনে সেটা ব্যবহার করার পরে সেটা আর বদলানো বা পাল্টানো যাবে না।
iii) দোকান থেকে কিনলে মোবাইল বা ল্যাপটপ জাতীয় জিনিস কেনার পর প্যাকেট খুলে ফেললে সেটা আর পাল্টানো যাবে না। তবে অনলাইনে বা ফোনে মোবাইল বা ল্যাপটপ জাতীয় জিনিস কেনার পর প্যাকেট খুলে ফেললেও ১৫ দিনের মধ্যে আপনি পন্যটি বদলাতে বা পাল্টাতে পারবেন।
iv)খাদ্য দ্রব্য ফলমূল ইত্যাদি কখনোই পাল্টানো যাবে না।
v) বিকিনি, ছেলে বা মেয়েদের আন্ডারওয়ার, পারফিউম ইত্যাদি বদলানো যাবে না।
vi) সেকেন্ডহ্যান্ড জিনিস এবং ব্যক্তিগত ভাবে কারো কাছ থেকে কিছু কিনলে সেটা বদলানো যাবে না।
vii) অনেক প্রতিষ্ঠানে দেখবেন সারাবছর ছাড় বা মুল্যহ্রাস (REA) চলছে। এরকম করার একটি বড় কারন হলো , ছাড় বা মুল্যহ্রাস এ কেনা পন্যের বদলানো বা পাল্টানোর আইন নেই।

৩. ফেরত দেয়া (Öppet köp):আপনি মনে করেন ২ টি দোকান থেকে জ্যাকেট ও জিন্স কিনলেন। কিন্তু বাসায় গিয়ে , আপনি দেখলেন জ্যাকেটের একটি চেন ঠিকমত কাজ করে না , এবং জিন্স এর রঙ টি এখন আর পছন্দ হচ্ছে না। ক্রেতা হিসেবে আপনি জ্যাকেট ও জিন্স আপনি ফেরত দিয়ে দিতে পারবেন। এক্ষেত্রে আপনি সম্পূর্ণ টাকা ফেরত পেয়ে যাবেন। কতদিনের মধ্যে ফেরত দেয়া যাবে , সেটি আপনার ক্যাশমেমো তে লেখা থাকে। তবে মনে রাখবেন জ্যাকেট বা জিন্স ব্যবহার করে বা নোঙরা করলে আর ফেরত দেয়া যাবে না। শুধু ঘরের মধ্যে ২/১ বার পরে “টেস” করলে তবেই ফেরত নিবে।

৪. অনলাইনে বা টেলিফোনে কেনাকাটা : অনলাইনে আপনি যাই কেনাকাটা করুন না কেন , আপনার ১৪ দিনের অধিকার আছে , সেটি ফেরত দেয়া বা পাল্টানোর। অনেকেই হয়তো জানেন না যে , এই ১৪ দিনের হিসাব কি রকম। আইন হলো : পণ্য টি হাতে পাবার দিন থেকে ১৪ দিনের হিসাব শুরু হবে। মনেকরুন , আপন জুলাই মাসের ২০ তারিখ অনলাইনে কোনো কিছুর অর্ডার দিয়েছেন এবং আগস্ট মাসের ১০ তারিখ পণ্যটি হাতে পেয়েছেন। তাহলে আগস্ট মাসের ২৪ তারিখের মধ্যে পণ্যটি ফেরত দেবার জন্য পোস্ট করতে হবে এবং বিক্রেতাকে জানিয়ে দিতে হবে। এরপর বিক্রেতা যদি পণ্যটি সেপ্টেম্বরের ৩০ তারিখেও ফেরত পায় তবুও আপনি “১৪ দিনের” আইন অনুযায়ী পণ্য ফেরত দিতে পারবেন। সুতরাং যারা সুইডেনে নতুন অনলাইনে শাড়ি কাপড়ের ব্যবসা শুরু করেছেন , তারা সাবধান , যে কেউ পণ্য কিনে ফেরত দিলে করার কিছু থাকবে না।আরো একটি জিনিস। মনে করুন আপনি কোনো ব্যক্তির কাছে অনলাইনে মোবাইল / ল্যাপটপ /গাড়ি ইত্যাদি দামি জিনিস কিনবেন। এখন বিক্রেতা আগেই টাকা চাচ্ছেন। ভুলেও আগেভাগে সব টাকা পাঠিয়ে দিয়ে ধরা খাবেন না। প্রতিদিন আইফোন বা ল্যাপটপ বিক্রির ভুয়া বিজ্ঞাপনে অনেকে টাকা পাঠিয়ে ধরা খেয়েছেন। তাহলে উপায় , হ্যা উপায় আছে। আপনি বিক্রেতাকে মাত্র ১০০ টাকা পাঠিয়ে দিন। তাহলে ওই বিক্রেতা আর ঐ মোবাইল / ল্যাপটপ /গাড়ি আর অন্য কাউকে বিক্রি করতে পারবে না। এরপর স্বশরীরে উপস্থিত হয়ে , দেখে, শুনে ,হাতায়ে তারপর মোবাইল / ল্যাপটপ /গাড়ি ইত্যাদির বাকি টাকা দিয়ে জিনিস বুঝে নিন।

৫. গ্যারান্টি : গ্যারান্টি থাকা কালীন অবস্থায় জিনিসটি নষ্ট হলে , আপনি বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানের কাছে জানালে উনারা , পণ্যটি ঠিক করে দিতে পারে (৩ মাস সময় পর্যন্ত লাগতে পারে) অথবা পুরা পণ্যটি পাল্টিয়ে দিতে পারে অথবা টাকা ফেরত দিতে পারে। এখন বিক্রেতার অধিকার আছে বা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান ঠিক করবে যে , পণ্যটি ঠিক করবে নাকি পাল্টাবে নাকি টাকা ফেরত দিবে। এখানে উল্লেখযোগ্য যে , মনে করুন যে ক্যাশমেমোতে লেখা পণ্যটির গ্যারান্টি ১ বছর। কিন্তু পণ্যটির নিজস্ব ওয়েব সাইটে লেখা আছে পণ্যটির গ্যারান্টি ২ বা ৩ বছর। এরকম হলে ২ /৩ বছরের গ্যারান্টি কার্যকর হবে।

৬. উপহার চেক (tillgodokvitto/presentkort) : এটি টাকার বিকল্প। টাকার সাথে এটির পার্থক্য হলো এটি দিয়ে শুধু ওই নির্দিষ্ট দোকানেই কেনাকাটা করতে পারবেন। এটির মেয়াদ ২ বছর থেকে ১০ বছর পর্যন্ত হতে পারে। কোনো কিছু ফেরত দিলে বিক্রেতা আপনাকে টাকার পরিবর্তে এই উপহার চেক দিতে পারে।

৭. দেউলিয়া(konkurs) : কোনো প্রতিষ্ঠান উঠে গেলে বা দেউলিয়া হয়ে গেলে , তখন উপরের কোনো আইন আর কার্যকর হবে না। ফলে আপনার সকল ভোক্তা অধিকার বাতিল হয়ে যাবে।

৮. পাঠানোর খরচ (frakt) : ক্রেতা হিসেবে আপনাকে সকল পণ্যের পাঠানোর খরচ দিতে হবে। পণ্যভেদে এই খরচ উঠানামা করে। তাই কোনো কিছু কেনার আগে দেখে নিবেন পাঠাতে কত লাগবে। কোনো কিছু ফেরত দিতে চাইলে , সেটির পাঠানোর খরচও ক্রেতা হিসেবে আপনাকে বহন করতে হবে। তবে কিছু কিছু দোকান শর্ত সাপেক্ষে পাঠানোর খরচ বা ফেরত দেবার খরচ নেয় না। মজার ব্যাপার হলো , টেলিফোনে কিছু কিনলে সেক্ষেত্রে শুধু বিক্রেতা ফেরত দেবার খরচ দিবে , এরকম একটি অদ্ভুত আইন আছে।

৯. দাম কত ? :বাংলাদেশে একটি কথা আছে , “মাছের বাজার”। সমগ্র সুইডেন হলো মাছের বাজার। মানে দামের কোনো ঠিকঠিকানা নেই। একই পণ্য এক দোকানে ১০ টাকা তো সেই পণ্য অন্য দোকানে ১১০ টাকা। তাই বাজার যাচাই করে আপনাকে কেনাকাটা করতে হবে।কিছু কেনাকাটাতে বিশেষ সাবধান থাকবেন , বিশেষত ইউরোপের বাহির থেকে কিছু কিনলে। যেমন মনে করুন চীন বা ইন্ডিয়া থেকে কম দামে কিছু কিনলেন। এরপর মাস দুয়েক পর বিশাল একটি বিল পেলেন ভ্যাট /ট্যাক্স বা কাস্টমস। কিছু করার নেই , টাকা দিতেই হবে।প্লেনের টিকিট ইত্যাদির অবস্থা খুব খারাপ। দেখলেন দাম খুবই কম। কিছু যখন টাকা দিতে গেলেন তখন দেখলেন অনেক টাকা। আসলে ট্রাভেল ট্যাক্স, এয়ারপোর্ট ট্যাক্স , লাগেজ বা ব্যাগ , ইত্যাদির নানাকিছুর খরচ বাদ দিয়ে টিকিটের দাম দেখাতে পারে। তাই বুঝে শুনে টিকিট কাটবেন ,,নতুবা সস্তায় কিনতে গিয়ে বিশাল টাকা দিতে হতে পারে।

১০. ভোক্তা অধিকার :i) কেউ যদি আইন না মানে , অথবা কোনো সমস্যা হয়। তবে নির্দ্বিধায় যোগাযোগ করেন , সুইডেনের ভোক্তা অধিকারে Allmänna reklamationsnämnden । তাদের যোগাযোগের উপায় ¨চিঠি
ARN, Box 174, 101 23 Stockholmফোন +46 (0) 8 508 860 00ওয়েব arn.se

আপনি চাইলে অনলাইনে অভিযোগ করতে পারেন , এমনকি চাইলে নিজের নাম গোপন রেখেও অভিযোগ করতে পারেন। দুঃখের বিষয় অনেক সময় সিদ্ধান্ত পেতে ৬ মাস বা এর থেকেও বেশি সময় লাগে। আবার কখনো কখনো ১০ মিনিটেই কাজ হয়।কোনো বিক্রেতা উল্টাপাল্টা কিছু করলে সাথে সাথে ভোক্তা অধিকারের কথা বলুন। দেখবেন জোঁকের মুখে চুন পরবে।

ii) আরো একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান আছে , যেখানে আপনি অভিযোগ জানাতে পারেন , সেটি হলো চিঠি

Konsumentverket/KO, Box 48, 651 02 Karlstad.ফোন +46 (0) 771–42 33 00ওয়েব konsumentverket.se

iii)মনেকরুন একটি প্রতিষ্ঠান অনেকের সাথে বাটপারি শুরু করেছে , তবে কয়েকজন মিলে একসাথে অভিযোগ জানাতে পারেন ,পৌরসভা = কমুন এ (kommun)। কমুন অবশ্যই তদন্ত কমিটি করে, অভিযোগের প্রমান পেলে , সেই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নানা শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারে।

vi) এবার বলি কোনো প্রতিষ্ঠান যদি আপনার টাকা মেরে দেয়। বা ব্যাংক কার্ড নিয়ে কোনো ঝামেলা করে। বা এই জাতীয় অন্য কোনো সমস্যা হলে আপনি আইনত পুলিশকে (polisen) জানাতে বাধ্য। তাই নির্দ্বিধায় পুলিশে একটি রিপোর্ট করে রাখুন। এটি ভবিষ্যতে আপনার নানা কাজে লাগবে।আমার সাথে ২ নম্বরি করা হয়েছে , উপরের ৪ টি অভিযোগের কোথায় জানাবো বুঝতে পারছি না। এরকম মনে হলে উপরের সব জায়গাতেই জানিয়ে দিন। বাকিটা তারাই বুঝে নিবে।

বসবাসের জন্য সুইডেন একটি চমৎকার দেশ। এখানে এখনো আইনের শাসন আছে। তাই ক্রেতা হিসাবে আপনি অনেক সুবিধা পেতেই পারেন। আইন জানা থাকলে সুইডেনে জীবন অনেকটাই সহজ। আর আইন না জানলে , সেটি আপনার দুর্বলতা , সেখানে অন্যরা সুযোগ নিতেই পারে বা নেয়। লেখাটিতে অনিচ্ছাকৃত তথ্য গত ভুল থাকতে পারে , এরকম ভুল জানার সাথে সাথে আপডেট তথ্য এডিট করা হবে।

সকল বিষয়