Select Page

সুইডেনে বাসাভাড়া করবেন কিভাবে ?

May 13, 2021 | জীবন যাপন, পড়ালেখা

সুইডেনে বর্তমানে প্রায় সব শহরে চলছে চরম “ভাড়া বাসা সংকট” . সুইডেনের আসার পর বাংলাদেশী বেশির ভাগ ছাত্র ছাত্রী যে আকাম টা করে, সেটা হলো বাসা ভাড়া নিয়ে জগাখিচুড়ি করা। মনে রাখবেন “পেরতেকে মোড়া পরের তোরে” এসব বুলি বই এ ভালো থাকে , বাস্তবে না। বন্ধু বান্ধব আত্মীয় স্বজন কেউ আপনাকে তার বাসাতে থাকতে দিবে না লম্বা সময়ের জন্য ,,, তাই আপনাকে বাসা ভাড়া করতেই হবে। সুইডেনের অনেক ইউনিভার্সিটি বাসা ভাড়ার গ্যারান্টি বা নিশ্চয়তা দিয়ে থাকে। তবে বাস্তবে এটি সত্য না। কারণ এর সাথে অনেক শর্ত দেয়া থাকে, যা অনেকের অজানা। তাই ভর্তি হলেই বাসা ভাড়া পাবেন ,, এমন কোনো নিশ্চিয়তা নেই। তাহলে কিভাবে বাসা ভাড়া করবেন ? বা বাসা নিশ্চিত করবেন ?সমস্যা সমাধানের উপায় :

১. একটি ওয়েব সাইট দিয়ে ভর্তির মত, একটি ওয়েব সাইট দিয়ে বাসা ভাড়া নিয়ন্ত্রণ করা হয় না। বরং প্রতিটি ইউনিভার্সিটি বা শহরে আছে আলাদা আলাদা ওয়েব সাইট। আপনাকে প্রথমেই যা করতে হবে , তাহলো প্রতিটি ইউনিভার্সিটির সাথে এক বা একাধিক বাসা ভাড়া কোম্পানির চুক্তি থাকে। প্রতিটি ইউনিভার্সিটির ওয়েবে এই তথ্য পাবেন যে , কোন কোম্পানির সাথে ইউনিভার্সিটির চুক্তি আছে। এরপর আপনার ভর্তি নিশ্চিত হবার সাথে সাথে (ভিসা হবার আগেই) বাসা ভাড়া কোম্পানির ওয়েবে আপনার নাম রেজিস্ট্রেশন করুন। বেশিরভাগ নাম রেজিস্ট্রেশন করতে টাকা লাগে না। দরকার হলে ডিপোজিটের টাকা পাঠায়ে দিন। ভিসা না পেলে টাকা ফেরত পাবেন। আজ পর্যন্ত কোনো বাসা ভাড়া কোম্পানি টাকা মেরে দিয়েছে এমনটি আমি শুনিনি।মনে রাখবেন ,,কিছু বাসা ভাড়া কোম্পানি আপনার নাম রেজিস্ট্রেশন করার জন্য , আপনার “পারসন নম্বর” চাইতে পারে, যেটা আপনার নেই। এরকম হলে ওই বাসা ভাড়া কোম্পানিকে ইমেইল বা ফোন করলে, বিকল্প ব্যবস্থায় আপনাকে রেজিস্ট্রেশন করে দিবে।

২. ১ ম পন্থা কাজে না লাগলে ,,, ওই এলাকায় বাসা ভাড়া কোম্পানি র লিস্ট তৈরী করুন। এই লিস্ট পেতে আপনার এলাকার কমুন (kommun) এর সাথে যোগাযোগ করুন / ওয়েব দেখুন।

৩. একদম ছোটখাটো বহু বাসা ভাড়া কোম্পানি কোনো সিরিয়াল মানে না। ভালো করে সরাসরি যোগাযোগ বা টেলিফোনে যোগাযোগ করলে এক সপ্তাহের মাঝে বাসা পেয়ে যেতে পারেন।

৪. ফেসবুকে বাসা ভাড়া গ্রূপ আছে , আপনার এলাকারটি বেছে নিন ও সতর্ক দৃষ্টি রাখুন। ব্লকেট (www.blocket.se) সহ বেশ কিছু ওয়েবে বাসা ভাড়ার বিজ্ঞাপন আসে , সুইডিশ না জানলে বন্ধু বান্ধবের সাহার্যে কিভাবে এই ওয়েবে বাসা ভাড়ার বিজ্ঞাপন খুজা যায় তা শিখে নিন। এরপর নিজেই খুজুন। তবে সাবধান, অনেক ভুয়া বাসার বিজ্ঞাপন থাকে। তাই এই ওয়েব সাইট থেকে বাসা ভাড়া নিতে চাইলে ,,,আগে নিশ্চিত হবেন,,আসল নাকি নকল।

৫. স্টুডেন্ট ইউনিয়ন এর সাহার্য নিতে পারেন। সত্যিকার সাহার্য পাবেন কিনা জানি না। তবে চেষ্টা করে দেখতে পারেন। অনেক সময় তারা নিজেই ভালো বাসা খুঁজে দেয়…

৬. ২০০-৪০০ ক্রোনোর খরচ করে “বাসা ভাড়া নিতে চাই ” মর্মে স্থানীয় পত্রিকাতে নিজেই বিজ্ঞাপন দিতে পারেন। অনেক সময় এটি খুব কাজে লাগে।

৭. পয়সা ওয়ালা সুইডিশ বড় লোকের হাবলা ছেলে বা সুন্দরী মেয়ে কে বিয়ে করে ফেলুন ,,,,,,, পরে কোনো ঝামেলা হলে আমি দায়ী না। ……….. এই পয়েন্টটি বাদ দিয়ে দিন

৮. মনে রাখবেন বড় কোম্পানির সিরিয়ালে থাকার চেয়ে ছোট কোম্পানিতে হুট্ করেই বাসা পাওয়া যায়.

৯. ইউরোপিয়ান যাদের মূলত পড়ালেখা শেষ বা এক্সচেঞ্জ স্টুডেন্ট (৬ মাসের জন্য আসে) তাদের দিকে খেয়াল রাখুন। ওরা চলে যাবার সময় বাসাটি আপনার নামে দিয়ে যেতে পারে।

১০. সামর্থ থাকলে বাসা কিনে ফেলুন। এরপর সেই বাসাতে সাবলেট দিয়ে দিলে, আপনার খরচ মেটানোর পরেও কিছু টাকা থাকবে। সেই টাকা তে মিষ্টি কিনে পাঠায়ে দিন।সুইডেনে বাসা ভাড়া নেবার মূলত তিন টি স্তর আছে।

১. সরাসরি নিজ নামে বাসা নিয়ে রাজার হালে থাকা।

           ১ ক) একা থাকলে খরচ অনেক বেশি হবে , তবে অন্য সব ঝামেলা মুক্ত।           
১ খ) নিজের ভাড়া বাসা বা রুমে বন্ধু বান্ধব বা স্বামী স্ত্রী মিলে থাকা। এটি কাগজে কলমে ঘোষণা না দিয়ে থাকলে অবৈধ !!!

২. অন্যের নামে বাসা নিয়ে নিজে থাকা , সুইডিশ বলে “আন্দ্রা হ্যান্ড”.

          ২ ক) কাগজে কলমে ঘোষণা দিয়ে থাকলে সব ঝামেলা মুক্ত।          
২ খ) কাগজে কলমে ঘোষণা না দিয়ে থাকলে আইনত দণ্ডনীয় !!!

৩. কাগজে কলমে ঘোষণা না দিয়ে সরাসরি অন্যের রুমে বা বাসাতে থাকা। এতে ক্যাশ টাকা বাসা ভাড়া হিসেবে দিতে হয়। এবং এটি আইনত দণ্ডনীয়। তাহলে বুঝতেই পারছেন বুঝে বা না বুঝে অনেক স্টুডেন্ট বাসা ভাড়া সংক্রান্ত “আইনত দণ্ডনীয়” অপরাধ করে থাকে। তবে ভয়ের আপাতত কিছু নেই। কারণ আইন প্রয়োগকারী পুলিশ বা অন্য কেউ এসব বিষয় নিয়ে মাথা ঘামায় না। ভাবে অল্প কয়েকদিনের জন্য পড়তে এসেছে এদের নিয়ে ঝামেলা করে লাভ নেই।শুধু একটি বিষয়ে সব সময় সতর্ক থাকতে হবে ,, যেন কেউ আপনি যে বাসাতে থাকেন সেটা নিয়ে অভিযোগ না করে। অভিযোগ করার মতো সম্ভাবনা বেশি হলে তাড়াতাড়ি বাসা বদল করে ফেলুন।অনেকেই পরিবার নিয়ে আসেন বা আসবেন ,,তাদের কি হবে ?সুইডেনের প্রায় শতভাগ ছাত্র বাসা শুধু ছাত্র ছাত্রীদের জন্য, সেখানে পরিবার নিয়ে বা বাচ্চা নিয়ে থাকা যাবে না , এটি আইনের কথা ! বাস্তবে অনেকেই ছাত্র বাসাতে পরিবার নিয়ে বা বাচ্চা নিয়ে থাকে।যাদের পরিবার আছে ,, তারা একটু বুদ্ধি করে ,,এমন ছাত্র বাসা ভাড়া নিবেন ,,যেখানে রুম কারো সাথে শেয়ার করতে হবে না। একক রুম বা ষ্টুডিও এপার্টমেন্ট হলে ভালো হয়। স্বভাবিকভাবেই এই ধরণের রুম বা বাসার ভাড়া একটু বেশি হবে। ভয়ের কিছু নেই। ভাড়া যাই হোক ,,,বাসা ভাড়া নিন। এরপর সুইডেনে আসার পর খুব সহজেই অন্য কম ভাড়ার বাসাতে চলে যেতে পারবেন। আবারো একটি কথা বলি ,,,বুঝে বা না বুঝে অনেক স্টুডেন্ট বাসা ভাড়া সংক্রান্ত “আইনত দণ্ডনীয়” অপরাধ করে থাকে। তবে ভয়ের আপাতত কিছু নেই। কারণ আইন প্রয়োগকারী পুলিশ বা অন্য কেউ এসব বিষয় নিয়ে মাথা ঘামায় না। ভাবে অল্প কয়েকদিনের জন্য পড়তে এসেছে এদের নিয়ে ঝামেলা করে লাভ নেই। শুধু একটি বিষয়ে সব সময় সতর্ক থাকতে হবে ,, যেন কেউ আপনি যে বাসাতে থাকেন সেটা নিয়ে অভিযোগ না করে। অভিযোগ করার মতো সম্ভাবনা বেশি হলে তাড়াতাড়ি বাসা বদল করে ফেলুন।বৌ বাচ্চা সহ বাসা ভাড়া অথবা থাকার জায়গা নিশ্চিত না করে ,,কোন মতেই সুইডেনে আসবেন না। বেশি টাকা দিয়ে হলেও বাসা নিশ্চিত করুন। এরপর সুইডেনে আসার পর খুব সহজেই অন্য কম ভাড়ার বাসাতে চলে যেতে পারবেন। মনে রাখবেন সুইডেনে ৪ /৫ দিন হোটেলে থাকতে যে খরচ হবে ,,সেই টাকা ১ মাস বাসা ভাড়ার সমান।ছাত্র বাসা বনাম নরমাল বাসা ?আপনি যদি ছাত্র বাসা ভাড়া নেন ছাত্র হিসেবে, তবে কিছু বাড়তি সুবিধা পাবেন। যেমন :১. পানি + কারেন্ট এর এর জন্য আলাদা বিল দিতে হবে না , যতখুশি ব্যবহার করতে পারবেন।২. ঘর গরম করার মেশিনের জন্য আলাদা বিল দিতে হবে না, বৌ কে নিয়ে ঘরের মধ্যে সোওনা বা স্টিম বাথ করতে পারবেন,,, নাউযুবিল্লাহ৩. ইন্টারনেট ফ্রি৪. পার্কিং ফ্রি এবং৫. ফার্নিচার ফ্রি। সাধারণত খাট , সোফা, টেবিল , চেয়ার ইত্যাদি যাবতীয় আসবাবপত্র দেয়া থাকে।থামেন থামেন ,… এখনই এত খুশি হয়েন না। উপরের সকল সুবিধা সব শহরে বা সব কোম্পানি দিবে না। তাই আগে থেকেই নিশ্চিত হয়েন কোনটি আসলেই ফ্রি , নতুবা জমি বিক্রি করে পানি + কারেন্ট বিলের টাকা দিতে হতে পারে।

সকল বিষয়