Select Page

সন্তানকালীন ছুটি (föräldrapenning)

Sep 19, 2021 | সরকারি অফিস

 সন্তানকালীন ছুটি (föräldrapenning)

দুনিয়ার বিভিন্ন দেশে কোন নারী গর্ভবতী হলে অথবা ছোট বাচ্চা থাকলে , সেই নারীকে মাতৃত্বকালীন ছুটি দেয়া হয়। সুইডেন অন্য  দেশের থেকে ভিন্ন।  এই দেশে মেয়েদের মাতৃত্বকালীন ছুটির পাশাপাশি সন্তানদের বাবা দের পিতৃত্ব কালীন  ছুটি দেয়া হয়।  একারনে আমি “মাতৃত্বকালীন + পিতৃত্ব কালীন  ছুটি ” কে একসাথে সন্তানকালীন ছুটি বলি।  (föräldrapenning)

আইন অনুযায়ী সুইডেনে বসবাসকারী সবাই এই ছুটি পেতে পারেন , তবে বাস্তবে ভিন্ন।  সবার এই ছুটি নেবার সুযোগ নেই এবং থাকলেও সীমিত।  বিস্তারিত ধাপে ধাপে জেনে নিন।  

1. ছাত্র ভিসা এবং তাদের পরিবার বা স্পাউজ এর জন্য :

সুইডেনে ছাত্রদের ভিসা সাধারনত এক বছর বা ১৩ মাসের দেয়া হয়।  এই ভিসাতে সরাসরি আইনে সন্তানকালীন ছুটি নেয়া যাবে না ,,এরকম লেখা নেই।  তবে কেউ যদি টিউশন ফি না দেয় অথবা পরীক্ষায় পাশ না করে তবে উনার ভিসা এমনিতেই বাতিল হয়ে যাবে।  ফলে  সন্তানকালীন ছুটি নেয়া যায় না।  তবে অল্প কিছুদিনের  জন্য নিলে অসুবিধা নেই। অন্যদিকে ছাত্র ভিসা দেয়া হয় পড়ালেখা করার জন্য , কেউ সন্তানকালীন ছুটি নিতে চাইলে ,,,ছুটি নিয়ে বাংলাদেশে ফেরত যেতে পারবেন , সেক্ষেত্রে সমস্যা হবে না।  ছাত্র ভিসায় সুইডেনে এসে কয়েক মাস চাকরি করে এরপর সন্তানকালীন ছুটি নিয়ে বসে বসে সরকারের টাকা নিবেন ,,এটি অন্যায়।  ধরা খেলে শাস্তি পাবেন নিশ্চিত।  

ছাত্র এর পরিবার বা স্পাউস যদি চাকরি করেন তবে উনি সন্তানকালীন ছুটি নিতে পারবেন , স্পাউস এর ক্ষেত্রে আইনত এবং বাস্তবে কোন  ঝামেলা নেই।  সরকারি টাকা না পাবার সম্ভাবনা প্রায় শতভাগ। 

2. ওয়ার্ক পারমিট ভিসা এবং তাদের পরিবার বা স্পাউজ এর জন্য :

সুইডেনে ওয়ার্ক পারমিট  ভিসা সাধারনত দুই  বছর দেয়া হয়।  এই ভিসাতে সরাসরি আইনে সন্তানকালীন ছুটি নেয়া যাবে না ,,এরকম লেখা নেই।  তবে  আইনে বলা আছে যদি কারো মাসিক আয় ১৩ হাজারের নিচে নেমে যায় তবে ওয়ার্ক পারমিট বাতিল হয়ে যাবে। সন্তানকালীন ছুটি তে বেতনের ৮০% টাকা সরকার দেয়।  অর্থাৎ আপনার বেতন যদি ২০ হাজারের বেশি হয়, তবে  সন্তানকালীন ছুটি তে ১৩ হাজারের বেশি টাকা পাবেন , ফলে এদিক দিয়ে আপনি নিরাপদ।  আর আপনার বেতন যদি ২০ হাজারের কম হয়, তবে আপনার জন্য সন্তানকালীন ছুটি বিপদ নিয়ে আসতে পারে।  

সমস্যা আরো আছে , সন্তানকালীন ছুটির টাকা আপনার চাকরিদাতা কোম্পানি দেয় না বরং  সরকার দেয়।  সুতরাং আপনার ভিসা কেস অফিসার আপনি যে কয় মাস “সন্তানকালীন ছুটি” নিয়েছেন তা আপনার “পি আর” আবেদন থেকে বাদ দিতে পারেন। “Du får endast räkna beskattade inkomster från lagliga anställningar.” মনে করুন আপনি ৬ মাস “সন্তানকালীন ছুটি” নিয়েছেন।  ফলে ৪৮ মাসের বা চারবছর পর আপনি পি আর পাবেন না বরং আরো ৬ মাস অতিরিক্ত অপেক্ষা করতে হবে।  যেহেতু ওয়ার্ক পারমিট ভিসা ৬ মাসের জন্য এক্সটেনশন করা যায় না বরং ২ বছর করে হিসাব হয়।  ফলে বাস্তবে  ৬ মাস “সন্তানকালীন ছুটি” নিয়ে থাকলে আপনাকে ৬ বছর চাকরি করতে হবে এরপর পি আর পেতে পারেন। (সবার জন্য এই আইন না , নানাবিধ ব্যতিক্রম আছে ) . কেউ যদি ১৮ মাসের বেশি  “সন্তানকালীন ছুটি” বা অসুস্থতা জনিত ছুটি নিয়ে থাকে তবে এমনিতেই উনার ওয়ার্ক পারমিট বাতিল করে দেয়া হবে  অথবা বিশেষ বিবেচনা করলে অতিরিক্ত আরো ২ বছর চাকরি করতে হবে “পি আর” পেতে চাইলে।  

ওয়ার্ক পারমিট ভিসা এর পরিবার বা স্পাউস যদি চাকরি করেন তবে উনি সন্তানকালীন ছুটি নিতে পারবেন ,  তবে কমপক্ষে ১৮ মাস চাকরি থেকে উপযুক্ত পরিমানে  বেতন আসতে হবে “পি আর” পেতে চাইলে। *

3. সুইডেনে যাদের পি আর বা পাসপোর্ট আছে :  আইনে এবং বাস্তবে কোন ঝামেলা নেই।  সকল ছুটি নিতে পারবেন এবং সরকারি সুযোগ সুবিধা পাবেন। 

4. ইউরোপের অন্য  দেশ থেকে যারা এসেছেন :  এটি সম্পর্কে নিশ্চিতভাবে কিছু বলা সম্ভব না।  কারন  এক এক জনের কাগজপত্র ভিন্ন  ভিন্ন,  ফলে বিভিন্ন আইন রয়েছে।  আপনাকে försäkringskassan এবং migrationsverket এ যোগাযোগ করে নিজেই সব জেনে নিতে হবে।  

5. কতদিন সন্তানকালীন ছুটি নেয়া যায় ?

প্রতিটি বাচ্চার জন্য স্বামী স্ত্রী দুজনে সর্বমোট ৪৮০ দিন সন্তানকালীন ছুটি নিতে পারবেন।  যেমন “স্ত্রী ৯০ দিন + স্বামী ৩৯০ দিন”  অথবা “স্ত্রী ৩০০ দিন + স্বামী ১৮০ দিন”।  স্বামী স্ত্রী নিজেরা ঠিক করবেন , কে কয়দিন সন্তানকালীন ছুটি নিবেন তবে একজন একা ৩৯০ দিনের বেশি ছুটি পাবেন না। 

বাচ্চার বয়স ১ বছর হবার আগে পর্যন্ত স্বামী + স্ত্রী একসাথে একইদিনে সন্তানকালীন ছুটি নিতে পারবেন।  সেক্ষেত্রে ১ দিন কে কাগজে কলমে ২ দিন বিবেচনা করা হবে।  যেমন  স্বামী + স্ত্রী একসাথে এক মাস সন্তানকালীন ছুটি কাটালে সেটিকে ৬০ দিন হিসেবে বিবেচনা করা হবে।  এছাড়া সরকারি হাসপাতাল যদি কোন নারীকে গর্ভবতী হিসেবে ঘোষনা  দেয় , তবে বাচ্চা জন্ম হবার আগেও সেই নারী সন্তানকালীন ছুটি  নিতে পারবেন।  

6. সন্তানের জন্ম যদি বিদেশে হয় , তাহলে কি হবে ?

আপনার সন্তানের জন্ম যদি ইউরোপের অন্য দেশে হয় তবে সুইডেন সরকার চেষ্টা করে সেই বাচ্চার জন্য সন্তানকালীন ছুটি নেবার ইতিহাসের খোঁজ খবর করার।  উপযুক্ত তথ্য পেলে সেই হিসাব অনুযায়ী ৪৮০ দিনের হিসাব করে।  অন্যথায় সন্তানকালীন ছুটি নেবার দিনের সংখ্যা কমায় দেয় ,,যেমন অনেক ক্ষেত্রে ৪৮০ দিনের পরিবর্তে ২০০ দিন দিতে পারে। 

আপনার সন্তানের জন্ম যদি ইউরোপের বাহিরে বা বাংলাদেশে হয় তবে সুইডেন সরকার বাচ্চার বয়স অনুযায়ী সন্তানকালীন ছুটি নেবার দিনের সংখ্যা কমায় দেয় ,,যেমন অনেক ক্ষেত্রে ৪৮০ দিনের পরিবর্তে ২০০ বা মাত্র ৯০ দিন দিতে পারে। 

এক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কোন হিসাব নেই , সরকার নিজস্ব বিবেচনায় এই দিনের সংখ্যা নির্ধারন করে। 

7. বাচ্চার বয়স কত হওয়া পর্যন্ত সন্তানকালীন ছুটি নেয়া যায় ?

সাধারন হিসেবে বাচ্চার বয়স ৮ বছর হবার আগে পর্যন্ত  সন্তানকালীন ছুটি নেয়া যায়, কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে ১২ বছর পর্যন্ত নেবার সুযোগ থাকে।  তবে নতুন আইন অনুযায়ী বাচ্চার বয়স ৪ হয়ে গেলে এরপর  অনেক কিছু সীমিত করে দেয়া হয়।  তাই সরকার থেকে পরামর্শ দেয়া হয় যে , বাচ্চার ৪ বছর হবার আগেই সন্তানকালীন ছুটি নিয়ে নেবার জন্য।  এটাই সবচেয়ে ভালো বুদ্ধি। 

8. কত টাকা পাওয়া যাবে ?

কত টাকা পাবেন সেই হিসাব জটিল।  তবে সহজ হিসাব হলো ,,

৪৮০ দিন সন্তানকালীন ছুটি  মধ্যে ৩৯০ দিনের জন্য হিসাব এরকম:- (sjukpenningnivå)

 আপনার বেতনের ৮০% টাকা সন্তানকালীন ছুটি হিসাবে পাবেন। এখন গত বছর যদি আপনি প্রতিদিন ১০০০ ক্রোনোর হিসেবে বেতন পেয়ে থাকেন তবে সন্তানকালীন ছুটি নিলে আপনি প্রতিদিন  ৮০০ ক্রোনোর হিসেবে টাকা পাবেন।  তবে এক দিনের জন্য আপনি সর্বোচ্চ ১০১২ ক্রোনোর পারেন।  এর বেশি কিছুতেই পাবেন না। 

আবার আপনার আয় যদি বেশি না থাকে যেমন গত বছর যদি আপনি প্রতিদিন ৫০০ ক্রোনোর হিসেবে বেতন পেয়ে থাকেন তবে সন্তানকালীন ছুটি নিলে আপনি প্রতিদিন ৪০০ ক্রোনোর হিসেবে টাকা পাবেন।

এখন যদি আপনার গত বছর আয় তেমন উল্লেখযোগ্য কিছু না থাকে বা একেবারেই কোন আয়  না থাকে ,,,তবে সেক্ষেত্রে তবে সন্তানকালীন ছুটি নিলে আপনি প্রতিদিন ২৫০ ক্রোনোর হিসেবে টাকা পাবেন। 

৪৮০ দিন সন্তানকালীন ছুটি  মধ্যে বাকি ৯০ দিনের জন্য হিসাব এরকম:- (lägstanivå) প্রতিদিনের জন্য ১৮০ ক্রোনোর করে পাবেন।  এটির সাথে আপনার আয়ের কোন সম্পর্ক নেই।  সবার জন্য এক দেশ এক রেট ,,,প্রতিদিন ১৮০ ক্রোনোর।  

9. বাচ্চা হলে নাকি ১০ দিনের “ইস্পেশাল” ছুটি পাওয়া যায়,  সেটির কাহিনী কি ?

বাচ্চা জন্ম হবার পরের ১০দিন কে বিশেষ দিন বলে।   এই সময়ে বাচ্চার বাবার উচিত নতুন মা হওয়া স্ত্রীকে সহযোগিতা করা।  একারনে  সরকার ১০ দিন বাচ্চার বাবাকে ছুটি দিয়ে থাকে।  এক্ষেত্রে বেতনের ৮০% টাকা পাবেন।  

10. বাচ্চা অসুস্থ্য হলেও নাকি ছুটি পাওয়া যায় , এছাড়া আরো নানাভাবে টাকা পাওয়া যায় , সেগুলি কি কি ?

 বাচ্চা অসুস্থ্য হলেও ছুটি  এবং বেতন পাওয়া যায়, একে সুইডিশ এ বলে Vård av barn (vab) কিন্তু এটি সন্তানকালীন ছুটি নয়।  এব্যাপারে এবং আরো যেসব বিষয়ে টাকা পাওয়া যায় সেগুলি নিয়ে আলাদা পোস্ট দেয়া হবে।  

11. ধুর আসল কথাই তো লিখেন নাই , কোথায় কিভাবে আবেদন করবো ?

সন্তানকালীন ছুটি অল্প কয়েকদিনের জন্য নিতে চাইলে কমপক্ষে ২ সপ্তাহ আগে আপনার চাকরিদাতাকে জানিয়ে দিতে হবে।  আর লম্বা ছুটি নিতে চাইলে কমপক্ষে ১ বা ২ মাস আগে জানিয়ে রাখা ভালো।  সন্তানকালীন ছুটি  ভেঙে ভেঙে বা অল্প অল্প করেও নেয়া যায়।  

সন্তানকালীন ছুটির টাকা পাওয়ার জন্য আপনাকে forsakringskassan এর ওয়েব সাইটে লগইন করে আবেদন করতে হবে।  সুবিধা হলো গত ৩ মাস আগের আবেদনও  এখন করতে পারবেন।  অর্থাৎ গত ৩ মাস থেকে শুরু করে সামনের দিনগুলির জন্য এখনই আবেদন করতে পারবেন , তবে ইয়ে বাচ্চা থাকতে হবে ,,,আর বাচ্চা না থাকলে বাচ্চা হবার চেষ্টা করতে পারেন।  

পানিপড়া বা ডিমপরা লাগলে আমার সাথে যোগাযোগ করিয়েন , আজকে এইপর্যন্ত বাকি লেখা অন্যদিন। 

সকল বিষয়